, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জীবননগর মিনাজপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনছুর আলী স্মৃতি ফটবল টুণামেন্টের ফাইনাল খেলায় বাবু খান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম  শুধু একজন সম্পাদক নন,একটি ব্র্যান্ড  নতুন করে যদি ফ্যাসিস্ট তৈরি হয় পালিয়ে যেতেও পারবে না: মাহমদু হাসান খান বাবু দামুড়হুদায় একই পরিবারের চারজনকে কুপিয়ে জখম: নিহত ১, তিন জনের অবস্থা আশংকা জনক চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে আরো ১ জনের মৃত্যু, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৭ চুয়াডাঙ্গায় কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ কমিটির সভা: সারের পর্যাপ্ততা ও সঠিক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা, কৃষকদের পাশে থাকার অঙ্গীকার চুয়াডাঙ্গায় মদ্যপানে ৬ জনের মৃত্যু, অসুস্থ ৩ জন চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত মদপানে ৬ জনের মৃত্যু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারেক রহমান জীবননগর উথলীতে নিহত দুই ভাইয়ের পরিবারের খোঁজ নিলেন বাবু খান

চুয়াডাঙ্গার রেলওয়ে ওভারপাস প্রকল্প, বেড়েছে জনদুর্ভোগ

  • প্রকাশের সময় : ০১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৭৮ পড়া হয়েছে

 

চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র রেলবাজার এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এখন তাতে ভর করেছে অনিশ্চয়তা। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরে শেষ হয়নি। বরং ধীরগতিতে চলা এ প্রকল্প নানা জটিলতায় আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ।

২০২২ সালের ২৮ জুন একনেকের বৈঠকে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দরপত্র আহ্বান করে কাজ পায় ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই)। ৭৪৮ দশমিক ৬৯৬ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস নির্মাণের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা। আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। প্রথম কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাসেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর পর সময়সীমা বাড়ানো হয় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথমদিকে দ্রুত গতিতে কাজ এগোলেও পরবর্তীতে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, নকশায় ত্রুটি, বিদ্যুৎ ও রেল কর্তৃপক্ষের খরচ বাড়া এবং সার্ভিস সড়ক না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে।

ওভারপাসের নকশার র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য প্রথমে ৩৩০ মিটার ধরা হয়েছিল। এতে ওভারপাসে উঠতে সংযোগ সড়ক খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। এজন্য নতুন করে সংশোধিত নকশা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নতুন নকশায় দু’প্রান্তের র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছে আরও ১০২ মিটার। এর ফলে অতিরিক্ত ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। একইসঙ্গে সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।

ওভারপাস নির্মাণ এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করে রাস্তা ফেলে রাখায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। যানজটের পাশাপাশি বর্ষায় রাস্তায় খানাখন্দে পানি জমে চলাচল আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

অটোরিকশা চালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকার রাস্তাগুলো এতটাই ভাঙাচোরা যে প্রতিদিন গাড়ি চালানো আমাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রায়ই যানজট লেগে যায়। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে, যা জীবিকা নির্বাহকে আরও কষ্টসাধ্য করে তুলছে।

মোটরসাইকেলের চালক আব্দুল্লাহ বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর বহু দিনের স্বপ্ন ছিল এই ওভারপাস নির্মাণ। আমরা ভেবেছিলাম কাজ শেষ হলে যাতায়াত সহজ হবে, যানজটের দুর্ভোগও কমবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। বরং কাজ অসম্পূর্ণ থাকার কারণে প্রতিদিন আমাদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই কষ্টের মধ্যে দিয়ে চলাচল করছে।

অটোরিকশার যাত্রী সুমি খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা প্রতিদিনই এই রাস্তায় যাতায়াত করি। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রতিটি দিন আমাদের কষ্ট করে চলতে হয়, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য এই দুরবস্থা আরও ভোগান্তিকর হয়ে উঠেছে। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হোক।

নিরাপদ সড়ক চাই চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর বলেন, প্রশাসনের অনিহা ও দায়িত্বহীনতার কারণে প্রকল্পটি ঝুলে আছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এ কাজ থেমে যেতে পারে। চুয়াডাঙ্গা রেলগেট এলাকা বহুদিন ধরেই মানুষের দুর্ভোগের জায়গা। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি ট্রেন চলাচলের কারণে দিনে প্রায় চার ঘণ্টা রেলগেট বন্ধ থাকে। এতে শহরের যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এজন্যই এ ওভারপাস ছিল চুয়াডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।

জনপ্রিয়

জীবননগর মিনাজপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনছুর আলী স্মৃতি ফটবল টুণামেন্টের ফাইনাল খেলায় বাবু খান

চুয়াডাঙ্গার রেলওয়ে ওভারপাস প্রকল্প, বেড়েছে জনদুর্ভোগ

প্রকাশের সময় : ০১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র রেলবাজার এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এখন তাতে ভর করেছে অনিশ্চয়তা। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরে শেষ হয়নি। বরং ধীরগতিতে চলা এ প্রকল্প নানা জটিলতায় আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ।

২০২২ সালের ২৮ জুন একনেকের বৈঠকে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দরপত্র আহ্বান করে কাজ পায় ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই)। ৭৪৮ দশমিক ৬৯৬ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস নির্মাণের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা। আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। প্রথম কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাসেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর পর সময়সীমা বাড়ানো হয় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথমদিকে দ্রুত গতিতে কাজ এগোলেও পরবর্তীতে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, নকশায় ত্রুটি, বিদ্যুৎ ও রেল কর্তৃপক্ষের খরচ বাড়া এবং সার্ভিস সড়ক না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে।

ওভারপাসের নকশার র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য প্রথমে ৩৩০ মিটার ধরা হয়েছিল। এতে ওভারপাসে উঠতে সংযোগ সড়ক খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। এজন্য নতুন করে সংশোধিত নকশা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নতুন নকশায় দু’প্রান্তের র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছে আরও ১০২ মিটার। এর ফলে অতিরিক্ত ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। একইসঙ্গে সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।

ওভারপাস নির্মাণ এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করে রাস্তা ফেলে রাখায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। যানজটের পাশাপাশি বর্ষায় রাস্তায় খানাখন্দে পানি জমে চলাচল আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

অটোরিকশা চালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকার রাস্তাগুলো এতটাই ভাঙাচোরা যে প্রতিদিন গাড়ি চালানো আমাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রায়ই যানজট লেগে যায়। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে, যা জীবিকা নির্বাহকে আরও কষ্টসাধ্য করে তুলছে।

মোটরসাইকেলের চালক আব্দুল্লাহ বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর বহু দিনের স্বপ্ন ছিল এই ওভারপাস নির্মাণ। আমরা ভেবেছিলাম কাজ শেষ হলে যাতায়াত সহজ হবে, যানজটের দুর্ভোগও কমবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। বরং কাজ অসম্পূর্ণ থাকার কারণে প্রতিদিন আমাদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই কষ্টের মধ্যে দিয়ে চলাচল করছে।

অটোরিকশার যাত্রী সুমি খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা প্রতিদিনই এই রাস্তায় যাতায়াত করি। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রতিটি দিন আমাদের কষ্ট করে চলতে হয়, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য এই দুরবস্থা আরও ভোগান্তিকর হয়ে উঠেছে। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হোক।

নিরাপদ সড়ক চাই চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর বলেন, প্রশাসনের অনিহা ও দায়িত্বহীনতার কারণে প্রকল্পটি ঝুলে আছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এ কাজ থেমে যেতে পারে। চুয়াডাঙ্গা রেলগেট এলাকা বহুদিন ধরেই মানুষের দুর্ভোগের জায়গা। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি ট্রেন চলাচলের কারণে দিনে প্রায় চার ঘণ্টা রেলগেট বন্ধ থাকে। এতে শহরের যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এজন্যই এ ওভারপাস ছিল চুয়াডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।