
সময়ের সাক্ষী, স্মৃতির মিনার যশোরের ঐতিহ্যবাহী ও দেশের বৃহত্তম সিনেমা হল ‘মণিহার’ হয়তো শিগগিরই হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়। একসময়ের জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্র কেন্দ্রটির সিঙ্গেল স্ক্রিন প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকপক্ষ।
প্রায় ৪২ বছর আগে, ১৯৮৩ সালের ৮ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করেছিল ‘মণিহার’। বিশাল হলরুম, আকর্ষণীয় স্থাপত্য ও উন্নত প্রযুক্তির জন্য দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এটি। এমনকি জাপান, কোরিয়া, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকা থেকেও চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ছুটে এসেছিলেন এ হলের অভিজ্ঞতা নিতে। নকশা করেছিলেন খ্যাতিমান স্থপতি কাজী মোহাম্মদ হানিফ।
কিন্তু সময় বদলে গেছে। পাল্টে গেছে দর্শকপ্রবণতা, বদলে গেছে বিনোদনের মাধ্যম। এখনকার দর্শক মাল্টিপ্লেক্স, ওটিটি কিংবা ইউটিউবে আসক্ত।
হলের মালিক জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন, “একসময় এখানে হাজার হাজার দর্শক আসত। এখন ছবি নেই, দর্শক নেই। শুধু খরচ বাড়ছে। বিদ্যুৎ বিল আসে দেড় লাখ, অথচ সিট ভরে না এক-চতুর্থাংশও।”
বর্তমানে তিনি কলকাতার পুরনো সিনেমা চালিয়ে হল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। ‘অভিমান’ নামের একটি বাংলা সিনেমা এরইমধ্যে চারবার চালানো হয়েছে। একই সময় সিনেপ্লেক্সে চলেছে সালমান শাহ অভিনীত পুরনো ছবি ‘বিক্ষোভ’।
তবে এতেও চলছে না খরচ। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিঙ্গেল স্ক্রিন প্রেক্ষাগৃহটি ভেঙে ফেলা হবে। ভবিষ্যতে এখানে মার্কেট, আবাসিক হোটেল এবং নতুন করে একটি আধুনিক সিনেপ্লেক্স গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি জানান, “স্টাফ আছে ২৫ জন। এত বড় স্থাপনা আর চালানো যাচ্ছে না। ডিজাইন তৈরির কাজ শেষ হলে অনুমোদনের পরপরই ভাঙার কাজ শুরু করব।”
তবে একেবারে সিনেমা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না মণিহারে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক জানিয়েছেন, বর্তমানে চালু থাকা ‘মণিহার সিনেপ্লেক্স’ (মাল্টিপ্লেক্স) চালু থাকবে। অর্থাৎ ঐতিহ্য হারাচ্ছে সিঙ্গেল স্ক্রিনটি, কিন্তু আধুনিক রূপে নতুন প্রাণ পাবে ‘মণিহার’ নামটি।
‘মণিহার’ এক সময় ঢাকাই সিনেমার অভিজাত গন্তব্য ছিল। ঢালিউডের অনেক সিনেমার প্রথম প্রদর্শন হতো এই হলে। এক দশক আগেও ঈদের দিনে টিকিট পাওয়া ছিল যুদ্ধের মতো। সিঙ্গেল স্ক্রিনে ১৪৩০ আসন নিয়ে এটি ছিল দেশের বৃহত্তম সিনেমা হল। আজ সেই ‘মণিহার’কেই বিদায় জানানোর পালা।