চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কম্পিউটার আনুষঙ্গিক খাতে ২৪ লাখ টাকা খরচ দেখানো হলেও তার কোনো হদিস মিলছে না। তিন মাস আগে বরাদ্দ আসার পরও হাসপাতালের স্টোররুমে সেসব সামগ্রীর কোনো অস্তিত্ব নেই। এ ঘটনায় হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ১ জুন সদর হাসপাতালের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ক্রয়ে ২০ লাখ এবং কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক খাতে আরও ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ক্রয়কৃত সব উপকরণ প্রথমে স্টোরকিপারের কাছে আসার কথা। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও স্টোরে কোনো সামগ্রীই ঢোকেনি। অথচ গত জুনেই এই টাকা উত্তোলন করেছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস। সদর হাসপাতালের স্টোররুম ঘুরে দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী বলতে মাত্র চার কার্টুন জীবাণুনাশক রয়েছে। এর বাইরে ওই রুমে আর কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী মজুত পাওয়া যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী আব্দুস সবুর বলেন, তত্ত্বাবধায়ক স্যার নিজেই বরাদ্দের টাকা ও উপকরণগুলো তদারকি করেন। স্যার হয়তো নিয়ম মেনেই খরচ করেছেন। আপনারা স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপকরণ ছাড়াই পুরো বরাদ্দের টাকা কী কাজে ব্যবহৃত হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর তিনি বলেন, বিষয়টি দেখতে হবে। তারপর জানাতে পারবো। তবে কবে তিনি এই ব্যয়ের হিসাব জানাতে পারবেন তা নিশ্চিত করে বলেননি। জেলার প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এমন প্রকাশ্য দুর্নীতির খবর হতবাক ও ক্ষুব্ধ করেছে সাধারণ মানুষকে।
বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাবেক সভাপতি নাজমুল হক স্বপন বলেন, ‘এর আগেও সিভিল সার্জনের দুর্নীতির খবর আমরা জেনেছি। সম্প্রতি দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুর্নীতিও প্রকাশ পেয়েছে। এবার সদর হাসপাতালে এমন ঘটনা জানতে পেরে হতবাক হয়েছি। স্বাস্থ্য-সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে এভাবে টাকা গায়েব হলে সেবার মান ভেঙে পড়বেই। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি।’
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দেখভালসহ অর্থনৈতিক নানা কার্যক্রম তত্ত্বাবধায়ক নিজে তদারকি করেন। আমাদের আন্ডারে না। তবে আমরা পরামর্শ দিতে পারি। আপনি ডিজি অফিস কিংবা ডিডি অফিস অর্থাৎ স্বাস্থ্য পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। প্রকাশ্য বরাদ্দের টাকা গায়েব হওয়া নিয়ে এখন জেলাজুড়ে আলোচনা চলছে। সচেতন মহল বলছে, এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি আরও বিস্তৃত হবে।