, সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :

কুড়ুলগাছি রহিমা’র ফাঁদে সর্বশান্ত:তক্ষক দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা প্রতারণা

  • প্রকাশের সময় : ০৮:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫
  • ৩৬ পড়া হয়েছে

 

শিমুল রেজা:
হাঁস পা ওয়ালা ‘তক্ষক’ নামের প্রাণি খোঁজেন। দেড়শ গ্রাম হলে বিক্রি করা যাবে ‘হাজার কোটি’ টাকা। শুধু ‘পকেট মানিই’ দেবে দুইশ কোটি টাকা। এটা হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত। দেশের যেখানেই থাকুক না কেন সেখানই বায়ার (ক্রেতা) যাবে। হেলিকপ্টারে গিয়ে নিয়ে আসা হবে’।

দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি স্থানীয় এক দোকানে পাশে বসে এমনটিই গল্প করছিলেন একজন মহিলা আরেক জনের সাথে। অপরিচিত ওই দুই ব্যক্তির কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় অনেক অজানা তথ্য। তারা একটি প্রাণির কথা বলছিলেন। প্রাণিটির নাম ‘তক্ষক’। দেখতে গুই সাপের বাচ্চার মতো। গায়ে লাল সিঁদুরের ও সাদা ফোঁটার মতো রয়েছে। আকারে ছোট। তবে ছোট হলেও অনেক বয়সী। এই প্রাণিটি চড়ামূল্যে বিক্রি হয়। তাই অনেকেই এটির সন্ধানে ঘুরে ঘুরে নিঃস্ব হতে বসেছেন। তবু তারা হতাশ নন; খুঁজেই চলছেন। যেখানে একটু সন্ধান পাচ্ছেন, সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন।

তাদের মতে, তক্ষক নামের এই প্রাণির দুই ধরনের পা রয়েছে। কোনটার ‘মুরগী পা’ আর কোনটা দেখতে ‘হাঁস পা’ এর মতো। ‘হাঁস পা’গুলোর দাম খুব বেশি। তবে এক্ষেত্রে সাইজ হতে হবে সর্বনি¤œ সাড়ে ৯ ইঞ্চি লম্বা এবং ওজন হতে হবে ৫২ গ্রাম, সাইজ এবং ওজন এর কম হলে চলবে না। ইঞ্চির মাপ ধরা হয় চোখ থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত। ‘মুরগি পা’ ওয়ালা তক্ষকের ওজন হতে হবে ২৫৫ গ্রাম এবং সাড়ে ১৫ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। এছাড়াও তক্ষকের আরো একটা জাত আছে নাম- ‘বার্মিজ’। ‘বার্মিজটা’ ওজন সাড়ে তিনশ গ্রামের নিচে হলে বিক্রির অনুপযুক্ত।

তক্ষক দিয়ে ক্যান্সারের মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়, প্রতিবেশী দেশে এর ব্যাপক চাহিদা; মাথার ম্যাগনেটের দাম কোটি টাকা—এমন গুজবের ওপর ভর করে। দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি পশ্চিম পাড়ার রহিমা খাতুন এক নারী প্রতারক চক্র প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অধিক লাভের জন্যে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিরাও এখন তক্ষক কেনাবেচার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও প্রতারক মহিলা রহিমা খাতুনের মতন কিছু অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এই নারী মাদক মাদক কারবারি থেকে শুরু করে,বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে টার্গেট করে তাদেরকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই চরিত্রহীন রহিমা’র কারণে অনেকেই সবকিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত। রহিমা’র প্রথম স্বামী রিফাত উল্লাহ সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর, আর ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে কুড়ুলগাছি পশ্চিম পাড়ার তালাকপ্রাপ্ত রিফাত উল্লাহর স্ত্রী রহিমা খাতুন, নিজ বসতবাড়িতে এই প্রাণি বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরদাম হয় দুইভাবে। একটা থোক, আরেকটা স্ক্যান করে প্রাণির শরীরে থাকা ‘দানা’ হিসেব করে। তবে বেশিরভাগ বিক্রেতা স্ক্যানের বিপক্ষে। তারা থোক দরদাম করেন ছয় লক্ষ টাকা। চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা ব্যক্তি সেখানে যাওয়ার পর ওখানকার প্রতারক রহিমা খাতুন সহ তার বাহিনীর সিন্ডিকেটের লোকজন তাকে ধরে মারধর করে। তার টাকা পয়সা মোবাইল সবকিছু রেখে দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরপরই প্রতারক রহিমা খাতুন আত্মগোপনে চলে যান। তক্ষক দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র,

 

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, সাধারণ মানুষের মাঝে তক্ষক নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করছে। ২০০ গ্রাম ওজনের তক্ষকের দাম এক কোটি টাকা—এমন গুজবের ওপর ভর করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে অনেকেই, প্রতারক চক্রান্ত ফাঁদে পা দিয়ে সবকিছু হারিয়ে আজ সর্বস্বান্ত। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে তাদের হাতে কথিত ‘মহামূল্যবান’ তক্ষক বা এর কঙ্কাল গছিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে রহিমা খাতুন এর বিরুদ্ধে। মূলত এর দাম পাঁচ-দশ টাকাও হবে না। কারণ তক্ষকে মূল্যবান কিছুই নেই। বরং সমানে তক্ষক নিধনের কারণে প্রাণীটির বিলুপ্তি ঘটবে।’ বিষয়টির প্রতি সুনজর দিয়ে প্রতারণাকারী রহিমা খাতুনের প্রযোজনীয় আইনগত ব্যাবস্থা নিতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী সহ সচেতন মহল।

জনপ্রিয়

সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে দামুড়হুদায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা

কুড়ুলগাছি রহিমা’র ফাঁদে সর্বশান্ত:তক্ষক দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা প্রতারণা

প্রকাশের সময় : ০৮:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫

 

শিমুল রেজা:
হাঁস পা ওয়ালা ‘তক্ষক’ নামের প্রাণি খোঁজেন। দেড়শ গ্রাম হলে বিক্রি করা যাবে ‘হাজার কোটি’ টাকা। শুধু ‘পকেট মানিই’ দেবে দুইশ কোটি টাকা। এটা হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত। দেশের যেখানেই থাকুক না কেন সেখানই বায়ার (ক্রেতা) যাবে। হেলিকপ্টারে গিয়ে নিয়ে আসা হবে’।

দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি স্থানীয় এক দোকানে পাশে বসে এমনটিই গল্প করছিলেন একজন মহিলা আরেক জনের সাথে। অপরিচিত ওই দুই ব্যক্তির কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় অনেক অজানা তথ্য। তারা একটি প্রাণির কথা বলছিলেন। প্রাণিটির নাম ‘তক্ষক’। দেখতে গুই সাপের বাচ্চার মতো। গায়ে লাল সিঁদুরের ও সাদা ফোঁটার মতো রয়েছে। আকারে ছোট। তবে ছোট হলেও অনেক বয়সী। এই প্রাণিটি চড়ামূল্যে বিক্রি হয়। তাই অনেকেই এটির সন্ধানে ঘুরে ঘুরে নিঃস্ব হতে বসেছেন। তবু তারা হতাশ নন; খুঁজেই চলছেন। যেখানে একটু সন্ধান পাচ্ছেন, সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন।

তাদের মতে, তক্ষক নামের এই প্রাণির দুই ধরনের পা রয়েছে। কোনটার ‘মুরগী পা’ আর কোনটা দেখতে ‘হাঁস পা’ এর মতো। ‘হাঁস পা’গুলোর দাম খুব বেশি। তবে এক্ষেত্রে সাইজ হতে হবে সর্বনি¤œ সাড়ে ৯ ইঞ্চি লম্বা এবং ওজন হতে হবে ৫২ গ্রাম, সাইজ এবং ওজন এর কম হলে চলবে না। ইঞ্চির মাপ ধরা হয় চোখ থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত। ‘মুরগি পা’ ওয়ালা তক্ষকের ওজন হতে হবে ২৫৫ গ্রাম এবং সাড়ে ১৫ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। এছাড়াও তক্ষকের আরো একটা জাত আছে নাম- ‘বার্মিজ’। ‘বার্মিজটা’ ওজন সাড়ে তিনশ গ্রামের নিচে হলে বিক্রির অনুপযুক্ত।

তক্ষক দিয়ে ক্যান্সারের মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়, প্রতিবেশী দেশে এর ব্যাপক চাহিদা; মাথার ম্যাগনেটের দাম কোটি টাকা—এমন গুজবের ওপর ভর করে। দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি পশ্চিম পাড়ার রহিমা খাতুন এক নারী প্রতারক চক্র প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অধিক লাভের জন্যে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিরাও এখন তক্ষক কেনাবেচার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও প্রতারক মহিলা রহিমা খাতুনের মতন কিছু অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এই নারী মাদক মাদক কারবারি থেকে শুরু করে,বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে টার্গেট করে তাদেরকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই চরিত্রহীন রহিমা’র কারণে অনেকেই সবকিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত। রহিমা’র প্রথম স্বামী রিফাত উল্লাহ সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর, আর ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে কুড়ুলগাছি পশ্চিম পাড়ার তালাকপ্রাপ্ত রিফাত উল্লাহর স্ত্রী রহিমা খাতুন, নিজ বসতবাড়িতে এই প্রাণি বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরদাম হয় দুইভাবে। একটা থোক, আরেকটা স্ক্যান করে প্রাণির শরীরে থাকা ‘দানা’ হিসেব করে। তবে বেশিরভাগ বিক্রেতা স্ক্যানের বিপক্ষে। তারা থোক দরদাম করেন ছয় লক্ষ টাকা। চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা ব্যক্তি সেখানে যাওয়ার পর ওখানকার প্রতারক রহিমা খাতুন সহ তার বাহিনীর সিন্ডিকেটের লোকজন তাকে ধরে মারধর করে। তার টাকা পয়সা মোবাইল সবকিছু রেখে দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরপরই প্রতারক রহিমা খাতুন আত্মগোপনে চলে যান। তক্ষক দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র,

 

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, সাধারণ মানুষের মাঝে তক্ষক নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করছে। ২০০ গ্রাম ওজনের তক্ষকের দাম এক কোটি টাকা—এমন গুজবের ওপর ভর করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে অনেকেই, প্রতারক চক্রান্ত ফাঁদে পা দিয়ে সবকিছু হারিয়ে আজ সর্বস্বান্ত। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে তাদের হাতে কথিত ‘মহামূল্যবান’ তক্ষক বা এর কঙ্কাল গছিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে রহিমা খাতুন এর বিরুদ্ধে। মূলত এর দাম পাঁচ-দশ টাকাও হবে না। কারণ তক্ষকে মূল্যবান কিছুই নেই। বরং সমানে তক্ষক নিধনের কারণে প্রাণীটির বিলুপ্তি ঘটবে।’ বিষয়টির প্রতি সুনজর দিয়ে প্রতারণাকারী রহিমা খাতুনের প্রযোজনীয় আইনগত ব্যাবস্থা নিতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী সহ সচেতন মহল।